সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

যেসব খাবার গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়

লাইফস্টাইল ডেস্ক::

অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, ডায়েট বা খাবার কি সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা (ফার্টিলিটি) বৃদ্ধি করতে পারে? বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বলছে যে, কিছু খাবার নারী বা পুরুষের ফার্টিলিটি বাড়াতে পারে। কিন্তু আপনাকে সামগ্রিক ডায়েটে নজর রাখতে হবে। গবেষকরা পেয়েছেন যে, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ফার্টিলিটি হ্রাস করতে পারে। শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে, একজন মানুষের ওজন তার ফার্টিলিটির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত ওজন ও অতি কম ওজন উভয়েই সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা কমিয়ে ফেলতে পারে।

যেসব খাবার গর্ভধারণের সম্ভাবনা অথবা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাদেরকে ফার্টিলিটি সুপারফুড বলে। এসব খাবারের কোনো একটি আপনার বন্ধ্যাত্ব দূর করবে এমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না। আপনার গর্ভধারণে সমস্যা হলে আপনার ডায়েটে ফার্টিলিটি সুপারফুড অন্তর্ভুক্ত করে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।

কিছু পুষ্টি নারী-পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে, কিন্তু আমাদের ডায়েটের ওপর ভিত্তি করে এসব প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই সন্তান নিতে ইচ্ছুক দম্পতিদেরকে ডায়েটের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুষ্টির কনসেন্ট্রেড সাপ্লিমেন্ট সেবনের চেয়ে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া নিরাপদ। কিন্তু ফলিক অ্যাসিডের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য নয়- অধিকাংশ চিকিৎসক গর্ভধারণের চেষ্টাকালে ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট সেবনের পরামর্শ দেন।

ফার্টিলিটি সুপারফুড কেবলমাত্র প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যই সহায়ক নয়, এসব খাবার শরীরের অন্যান্য উপকারও করে। তাই এটা বলা যেতে পারে যে, এসব খাবার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নেও অবদান রাখতে পারে। বাচ্চা পেতে হলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই খাদ্য তালিকায় বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। প্রায়সময় বার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজের মতো অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে অল্প পরিমাণে ফার্টিলিটি সুপারফুড খেলে কাঙ্ক্ষিত ফল না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বা গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে এমন ১৫টি খাবার নিয়ে তিন পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।

* সূর্যমুখী বীজ ও সূর্যমুখী বীজের মাখন

সূর্যমুখী বীজ হলো ভিটামিন ই এর একটি চমৎকার উৎস। গবেষণায় পাওয়া গেছে, ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট সেবনে পুরুষদের ফার্টিলিটি বা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বেড়েছে। বিশেষ করে সূর্যমুখীর বীজ শুক্রাণুর গতিশীলতা ও শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং ডিএনএ ফ্র্যাগমেন্টেশন বা ভাঙ্গন হ্রাস করে। সূর্যমুখীর বীজ অন্যান্য উর্বরতা-বান্ধব পুষ্টিরও চমৎকার উৎস। এ বীজে ভিটামিন ই ছাড়াও ফোলেট, সেলেনিয়াম ও জিংক রয়েছে।সূর্যমুখী বীজে ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা ৩ ও ৬ও রয়েছে। পুরুষেরা সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সূর্যমুখী বীজ অথবা এ বীজের মাখন (সানফ্লাওয়ার সীড বাটার) খেতে পারেন। প্রোটিনের উৎস হিসেবে আপনার স্মুদিতে ২ চা-চামচ সানফ্লাওয়ার সীড বাটার মেশাতে পারেন।

* মোসাম্বির রস ও কমলার রস

মোসাম্বির রস ও কমলার রসে প্রচুর পরিমাণে পলিঅ্যামাইন পুট্রিসাইন রয়েছে, যা বীর্যের স্বাস্থ্য উন্নত করতে পারে। পুট্রিসাইন ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যও উন্নত করতে পারে। একটি গবেষণায় নারী ইঁদুরদেরকে ডিম্ব নিষিক্তের পূর্বে ও আগপর্যন্ত পুট্রিসাইন মেশানো পানি খেতে দেয়া হয়েছিল। দেখা গেছে, নিষিক্ত ডিম্বে ক্রোমোসোমাল ডিফেক্ট বা ক্রোমোসোমের ত্রুটি হার ৫০ শতাংশেরও বেশি হ্রাস পেয়েছে। তাই এখন এটা বলা যেতে পারে যে, পুট্রিসাইন সমৃদ্ধ খাবার ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর ক্রোমোসোমের শুদ্ধতা বজায় রাখতে পারে। মোসাম্বি ও কমলার ভিটামিন সি-ও সহায়ক হতে পারে। নিম্ন মাত্রার ভিটামিন সি শরীরের হরমোনগত ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আপনি মোসাম্বির রস বা কমলা রসের স্মুদি তৈরি করতে পারেন অথবা এসব ফলের স্লাইস সালাদে যোগ করতে পারেন অথবা এসব ফলের রস বের করে পান করতে পারেন। সতর্কতা হলো, মোসাম্বির রস কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধি করতে পারে, এমনকি তা বিপজ্জনকও হতে পারে। তাই আপনি কোনো ওষুধ সেবন করলে মোসাম্বির রস পান নিরাপদ কিনা জানতে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* ম্যাচিউর চিজ

ম্যাচিউর চিজে প্রচুর পলিঅ্যামাইন থাকে। পলিঅ্যামাইন হলো প্রোটিন যা উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ খাবারে পাওয়া যায়। এছাড়া প্রকৃতিগতভাবে মানব শরীরও পলিঅ্যামাইন উৎপাদন করে। গবেষণা বলছে যে, পলিঅ্যামাইন প্রজননতন্ত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বিশেষ করে ম্যাচিউর চিজে উচ্চ মাত্রায় পলিঅ্যামাইন পুট্রিসাইন রয়েছে, যা শুক্রাণুর স্বাস্থ্যে অবদান রাখতে পারে। গবেষণার আলোকে আরো ধারণা করা হচ্ছে যে, পুট্রিসাইন ডিম্বাণুর স্বাস্থ্যকেও উন্নত করতে পারে, বিশেষ করে ৩৫ বছর ও তদোর্ধ্ব বয়সের নারীদের। আপনার ডায়েটে এই পনিরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ন্ত্রণ করুন, কারণ অল্প পরিমাণ ম্যাচিউর চিজে প্রচুর ক্যালরি ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।

* ফুল-ফ্যাট দই ও আইসক্রিম

কোনো ফ্যাট অপসারণ করা হয়নি এমন দুধ অথবা এই দুধ থেকে প্রস্তুতকৃত দই, আইসক্রিম, ক্রিম চিজ ও অন্যান্য পনির গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে পারে। হার্ভার্ডের একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব নারী ফুল-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার খেয়েছিল তাদের ডিম্ব নিষিক্তের সমস্যা যারা লো-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবার খেয়েছিল তাদের তুলনায় কম ছিল। এ গবেষণায় লো-ফ্যাট খাবারের মধ্যে স্কিমড মিল্ক বা সর তোলা দুধ অথবা কম ফ্যাটের দুধ, শেরবেট, দই ও কটেজ চিজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফুল-ফ্যাট দুগ্ধজাত খাবারের মধ্যে সর না তোলা দুধ ও সম্পূর্ণ ফ্যাটের দুধ থেকে প্রস্তুতকৃত আইসক্রিম, ক্রিম চিজ ও অন্যান্য পনির অন্তর্ভুক্ত ছিল। আপনার ফার্টিলিটি বাড়াতে কম ফ্যাটের দুধের পরিবর্তে সম্পূর্ণ ফ্যাটের দুধ পান করুন। আপনার সকালের চা অথবা সিরিয়ালে ফুল-ফ্যাট দুধ মেশাতে পারেন। এছাড়া ফুল-ফ্যাট দুধ থেকে তৈরিকৃত খাবারও খেতে পারেন, যেমন- ফুল ফ্যাট দই ও আইসক্রিম। কিন্তু আপনি কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করছেন সে বিষয়ে সচেতন থাকুন। এটা মনে রাখতে হবে যে, শরীরের অতিরিক্ত ওজন ফার্টিলিটির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

* গরুর কলিজা

গরুর কলিজাতে অনেক পুষ্টি রয়েছে যা প্রজননতন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি এই খাবারে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২, রিভোফ্লাভিন (আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বি ভিটামিন), ফোলেট (প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ফলিক অ্যাসিড), সেলেনিয়াম, কোলিন (জন্মত্রুটির ঝুঁকি হ্রাস করে), জিংক (বীর্যের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ) ও কোএনজাইম কিউ১০ (ডিম্বের কোয়ালিটি ও শুক্রাণুর মোটিলিটি বাড়াতে পারে) পাবেন। কিন্তু গরুর কলিজা বেশি পরিমাণে খাবেন না। এই খাবার অতিরিক্ত খেলে ভিটামিন এ টক্সিসিটির উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে। এসব উপসর্গের মধ্যে দৃষ্টি সমস্যা, হাড় ব্যথা, ফ্র্যাকচারের বর্ধিত ঝুঁকি, বমিভাব ও বমি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়া গরুর কলিজাতে কপার থাকে বলে এটি অতিরিক্ত খেলে কপার টক্সিসিটি হতে পারে, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও নিউরোডিজেনারেটিভ চেঞ্জের কারণ হতে পারে এবং অ্যালঝেইমারস রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। তাই প্রতিদিন গরুর কলিজা খাবেন না, সপ্তাহে একবারই যথেষ্ট।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com